মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

বিশ্বের ১০ টি বৃহত্তম মসজিদ

বিশ্বের বৃহত্তম দশটি মসজিদ:
মসজিদ মুসলমানদের
দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য
নির্মিত স্থাপনা। শব্দটির
উৎপত্তি আরবি "মসজিদ" থেকে,যার
আভিধানিক অর্থ
শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থৎ
সিজদাহ করা। মসজিদের মালিক
হলেন স্বয়ং আল্লাহ।
বিশ্বের দশটি বৃহতম মসজিদ গুলোর
তালিকা... বিশেষ করে মসজিদের
আয়তন ও ধারন ক্ষমতার উপর
ভিত্তি করে।
১০. শেখ জায়েদ মসজিদ ("আরব
আমীরাত")
শেখ জায়েদ মসজিদটি সংযুক্ত আরব
আমীরাতের আবুধাবীতে অবস্হিত।
এটি বর্তমানে বিশ্বের দশম বৃহতম
মসজিদ এবং আবুধাবীর সবচেয়ে বড়
মসজিদ । মসজিদটির আয়তন ২২,০০০
স্কয়ার মিটার।এখানে এক
সাথে ৪০,০০০ জনের নামাজ আদায়
করার সুব্যবস্হা রয়েছে। এই মসজিদের
ব্যবহৃত ৫.৬২৭ স্কয়ার মিটার (৬০,৫৭০
স্কয়ারফুট) ক্ষেত্রের
কার্পেটটি বর্তমান
বিশ্বে সবচেয়ে বড় কার্পেট।
০৯. ফয়সাল মসজিদ ("পাকিস্তান")
১৯৮৬ সালে নির্মিত ফয়সাল
মসজিদটি পাকিস্তানের
ইসলামাবাদে অবস্হিত যা দক্ষিন
এশিয়ার বৃহত্তর ও পৃথিবীর নবম বৃহত্তর
মসজিদ। মসজিদটির আয়তন ৪৩,২৯৫.৮
স্কয়ার মিটার এবং লোক ধারন
ক্ষমতা ৭৪,০০০ জন।মসজিদটির ভেতরের
ডিজাইন (আর্কিটেকচার)বি­
শ্বে সবচেয়ে আধুনিকতার
দাবী রাখে।
০৮. দিল্লি জামে মসজিদ: ("ভারত")
পুরাতন দিল্লিতে অবস্হিত Masjid-i
Jahān-Numā দিল্লি জামে মসজিদ
নামে পরিচিত।
দিল্লি জামে মসজিদ
বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তর মসজিদ।
মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৫৬
সালে মসজিদটি নির্মান করেন।
মসজিদটিতে এক সাথে ৮৫,০০০ জন
নামাজ আদায় করতে পারেন।
০৭. বাদশাহী মসজিদ:("পাকিস্তান")
মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেব ১৬৭৩
সালে পাকিস্তানের
লাহোরে মসজিদটি নির্মান করেন।
এটি বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তর
মসজিদ। লোক ধারন ক্ষমতা ১,১০,০০০
জন। ঐতিহাসিক মসজিটির নামাজ
কক্ষ সাতটি সেকশনে ভাগ করা।
০৬. হাসান II মসজিদ: ("মরোক্কো")
হাসান II মসজিদটি মরোক্কোর সর্ববৃহৎ
এবং বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তর মসজিদ। ১৯৯৩
সালে স্হাপিত মসজিদটি মরক্কোর
কাসাবলংকায় আবস্হিত।
মসজিদটি আটলান্টিক মহাসাগরের
তীর ঘেষে নির্মান করা হয়েছে।
মসজিদটির আয়তন ৯০,০০০ স্কয়ার
মিটার। এখানে এক সাথে ১,০৫,০০০
জন নামাজ আদায় করতে পারেন।
বিশ্বের(মসজিদের) সবচেয়ে উচ্চ
মিনারটি এই মসজিদে রয়েছে যার
উচ্চতা ২১০ মিটার (৬৮৯ফুট)।অত্যন্ত
দামী ও রেয়ার মার্বেল,গ্রানাইড,
পাথর, কাঠ ব্যবহার
করা হয়েছে মসজিদটিতে যা মরোক্কোর
ছয় হাজার আর্টিস্টের প্রায় পাঁচ বছর
লেগেছিল স্হাপন করতে।
মসজিদটিতে নিখুঁতভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে নয়নাভিরাম
কারুকার্য।
০৫. ইস্তিকলাল মসজিদ
("ইন্দেনেশিয়া")
ইস্তিকলাল
মসজিদটি ইন্দেনেশিয়ার
জাকার্তায় অবস্হিত। দক্ষিন-পূর্ব
এশিযার বৃহত্তর ও বিশ্বের ৫ম বৃহত্তর
মসজিদ এটি। ১৯৭৮ সালে নির্মান
করা মসজিদটির আয়তন ৯৫,০০০ স্কয়ার
মিটার এবং লোক ধারন
ক্ষমতা ১,২০,০০০ জন।
০৪. তাজ উল মসজিদ ("ভারত")
তাজ উল মসজিদ ভারতের
ভোপালে অবস্থিত এটি বিশ্বের
চতুর্থ বৃহত্তর মসজিদ । ১৯০১ সালে এই
মসজিদটি নির্মান করা হয়।মসজিদটির
আয়তন ৪,০০,০০০ স্কয়ার মিটার বা ৯৮
একর ।এই মসজিদে ১,৭৫,০০০ জন মানুষ
একসাথে এই মসজিদে নামাজ আদায়
করতে পারে ।
০৩ মসজিদে নববী: "সৌদি আরব"
পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তর মসজিদ
হচ্ছে মসজিদে নববী।মসজিদে নববীর
শাব্দিক অর্থ হলো নবীর মসজিদ,
মদীনায় হিজরতের পর নবী হযরত
মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক নির্মিত
মদিনা মসজিদ
কে বোঝানো হয়ে থাকে।
হিজরতের পর মুসলমানদের নামাজের
জন্য নবী মুহাম্মদ
(সাঃ)"মদীনা মসজিদ" অর্থাৎ
"মসজিদে নববী" নির্মাণ করেন।
মসজিদটি নির্মান করতে ৭ মাস সময়
লেগেছিল। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের
সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে ৬২৩
খ্রিস্টাব্দের
মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত
মদিনা মসজিদের নির্মান কাল
নির্ধারন করা হয়।এই মসজিদের
অভ্যন্তরে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর
রওজা সমাধিস্থল অবস্থিত।মহানবীর
(সাঃ) র রওজার
দু’পাশে রয়েছে হযরত আবুবকর (রাঃ) ও
হযরত ওসমান (রাঃ)-এর কবর।বিশেষ
করে হজ্জ সম্পাদনের
আগে বা পরে হাজ্জ্বীরা মসজিদে নববীতে এক
নাগাড়ে কমপক্ষে ৮ দিন অবস্থান
করে নাগাড়ে ৪০ রাক্বাত নামাজ
আদায় করেন। মসজিদটির আয়তন ৪০০৫০০
স্কয়ার মিটার এবং ধারন
ক্ষমতা ৬,৫০,০০০ জন।
০২ ইমাম রেজা শ্রাইন: "ইরান"
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মসজিদ
হচ্ছে Imām Reza shrine.
মসজিদটি ইরানের
মাসহাদে অবস্হিত।ইতিহাসে
জানা যায় ৮১৮
সালে মসজিদটি নির্মান করা হয়।
ইমাম রিধঅ সহ আট ইমামের
সমাধি রয়েছে এখানে। মসজিদের
মূল অংশ ৫৯৮৬৫৭ স্কয়ার মিটার সহ
সর্বমোট আয়তন ৬৪৪৩৮৯০ স্কয়ার ফুট
এবং ধারন ক্ষমতা ৭,০০,০০০ জন।
মসজিদটির
সাথে একটা মিউজিয়াম,লাইব্রেরী,
চারটা সেমিনার কক্ষ,
ডাইনিং হল ও একটি ইসলামিক
ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
এখানে সুবিশাল বেশ
কয়েকটি নামাজ ও ইবাদত কক্ষ
রয়েছে যেখানে লাখো লাখো মুসলমান
একসাথে অবস্হান করতে পারেন।
০ মসজিদ আল-হারাম: "সৌদি আরব"
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও প্রধান মসজিদ
হচ্ছে মসজিদ আল-হারাম।৬৩৮
সালে স্হাপিত
মসজিদটি সৌদি আরবের
মক্কা নগরীতে অবস্হিত।মসজিদটি
পবিত্র ক্কাবা ঘরের চতুর্বেষ্টিত।
৩৫৬৮০০ স্কয়ার মিটার আয়তন (৮৮.২ একর)
বিশিষ্ট মসজিদটির লোক ধারন
ক্ষমতা ৮,২০,০০০ জন।এখানে সর্বমোট
৯টি মিনার রয়েছে।
ইতিহাসে জানা যায়, আল্লাহ র
হুকুমে হযরত ইব্রাহিম
(আঃ) ক্কাবা ঘর ও তদ্বসংলগ্ন এই
মসজিদ নির্মান করেন।ক্কাবা ঘরের
দিকে নির্দেশনা করেই পৃথিবীর
যেকোন প্রান্ত থেকে নামাজ
আদায় করা হয়। ক্কাবা ঘরের পূর্ব
পাশে রয়েছে (বর্তমান রং)
কালো একটা পাথর। পবিত্র
ক্কাবা ঘর তাওয়াফ করা হজ্জ্বের
অপরিহার্য একটা আঙ্গিক।

এপ্রিল ফোলের ইতিহাস

মুসলমানদের স্পেন বিজয় একটি ঐতিহাসিক
ঘটনা। স্পেন বিজয়ের
পূর্বমুহূর্তে সেখানে উইতিজা নামক এক
রাজা রাজত্ব করত। হঠাৎ
উইতিজাকে সিংহাসনচ্যুত করে রডারিক
সিংহাসন অধিকার করে। রডারিক ছিল অত্যন্ত
উচ্চাভিলাষী ও অত্যাচারী ব্যক্তি। রডারিক
সম্রাট উইতিজাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
অতঃপর রডারিকের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় ক্ষুদ্র
স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর প্রতি। রডারিক
প্রথমে আক্রমণ করে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের
সিউটা দ্বীপের স্বাধীন রাজা কাউন্ট
জুলিয়ানকে। জুলিয়ান প্রথমে পরাজিত
হয়ে রাজ্য ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
পরবর্তীতে জুলিয়ান সিউটা ও আলজিসিরাসের
গভর্ণরের দায়িত্ব পালন করতে থাকে।
ইউরোপের সমসাময়িক নিয়ম ছিল যে, প্রদেশের
গভর্ণর অথবা সামন্তরাজাদের পুত্র-
কন্যাকে কেন্দ্রীয় রাজ দরবারে প্রেরণ করা।
সম্ভবতঃ এর দু’টি কারণ ছিল। গভর্ণর
অথবা সামন্তরাজাগণ যেন সহজেই বিদ্রোহ
ঘোষণা করতে না পারে। অন্য কারণটি ছিল,
রাজকীয় পরিবেশে আদব-কায়দা, সৈন্য-
পরিচালনা ও রাজনীতি সর্ম্পকে সঠিক জ্ঞান
ও ধারণা অর্জন করা। তাই কাউন্ট জুলিয়ান
তার অত্যন্ত
সুন্দরী কন্যা ফ্লোরিন্ডাকে রাজধানী টলেডোতে প্রেরণ
করে। রাজধানীতে অবস্থানকালে রাজা রডারিক
ফ্লোরিন্ডার সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে।
জুলিয়ান তনয়ার প্রতি সে কামনার হাত
প্রসারিত করে। এই আচরণ ছিল যেমন গুরুতর
তেমনি মর্যাদাহানিকর। এই অপমানজনক ঘটনার
বিবরণ দিয়ে ফ্লোরিন্ডা গোপনে তার পিতার
নিকট সংবাদ পাঠায়। এমনিতেই কাউন্ট
জুলিয়ানের সঙ্গে রাজার সম্পর্ক ভাল ছিল
না। রাজ্য হারানোর বেদনার সঙ্গে যুক্ত হ’ল
কন্যার অবমাননা। প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য
এবং রডারিক নামক নরপশুর হাত
থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য জুলিয়ান
মূসা ইবন নুসাইরকে স্পেন আক্রমণের সাদর
আমন্ত্রণ জানান। এবার সেনাপতি মূসা বিন
নুসাইর প্রথমে পরীক্ষামূলক অভিযানের জন্য
তারিফ বিন মালিককে চারশ’ পদাতিক
এবং একশ’ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে স্পেনের
আলজিসিরাসে সফল অভিযান চালান। তারিফের
এই সফল অভিযানের সংবাদ পেয়ে মূসা বিন
নুসাইরের সহকারী সেনাধ্যক্ষ তারিক ইবনু যিয়াদ
সাত হাযার সৈন্য সমন্বয়ে গঠিত এক মুজাহিদ
বাহিনী অতি সফলতার সাথে ভূমধ্যসাগর ও
আটলান্টিক মহাসাগর
সংযোগকারী প্রণালিটি অতিক্রম করে ৯২
হিজরীর রজব অথবা শা‘বান মোতাবেক ৭১১
খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল অথবা মে মাসে স্পেন
ভূখন্ডে অবতরণ করেন। যে পাহাড়ের
পাদদেশে তারিক অবতরণ করেছিলেন তার
নামকরণ করা হয় ‘জাবালুত
তারিক’ (Gibralter)।
এ সংবাদ স্পেনের শাসনকর্তা রডারিকের
কর্ণগোচর হওয়া মাত্র তিনি যথাসাধ্য
প্রস্ত্ততি নিলেন আক্রমণ প্রতিরোধের
জন্য। অন্যদিকে সেনাপতি তারিকও তাঁর
অভিযানকে স্পেনের মূল ভূখন্ডের
দিকে পরিচালনা করলে সেনাধ্যক্ষ মূসা পাঁচ
হাযার সৈন্য প্রেরণ করেন। সর্বমোট ১২০০০
সৈন্যসহ সেনাপতি তারিক অগ্রসর হন। ১৯
জুলাই ৭১১ খ্রীষ্টাব্দে মুসলিম
বাহিনী এবং গথিক রাজা রডারিকের নিয়মিত
বাহিনীর মধ্যে ওয়াদী লাজু নামক স্থানে এক
তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে গথিক
বাহিনী ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পলায়ন করে। হাযার
হাযার গথিক সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। রডারিক
উপায়ান্তর না দেখে পলায়ন
করতে গিয়ে নদীবক্ষে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারান।
তারিক আরো অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেন। তিনি মুসলিম বাহিনীকে উদ্দেশ্য
করে এই ভাষণ দেন যে, ‘তোমাদের
সম্মুখে শত্রুদল এবং পিছনে বিশাল বারিধি। তাই
আল্লাহ্র কসম করে বলছি, যে কোন
পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ ও অবিচল
থাকা এবং আল্লাহ্র সাথে কৃত
ওয়াদা বাস্তবায়ন করা ব্যতীত তোমাদের
বিকল্প কোন পথ নেই’। সৈনিকগণও সেনাপতির
ভাষণের জবাব দেয়, জয় না হওয়া পর্যন্ত
আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। কারণ আমরা সত্য
প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
মুসলিম সৈনিকদের প্রচন্ড আক্রমণের
ফলে গথিক রাজ্যের একটির পর একটি শহরের
পতন হ’তে থাকে। ৭১১ খ্রীষ্টাব্দের
অক্টোবরে মুসলমানরা কর্ডোভা জয় করেন।
মুসলমানরা স্পেন জয় করার পর প্রথমে সেভিল
(Seville) কে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন।
কিন্তু সোলাইমান ইবনু আব্দিল মালিকের
যুগে স্পেনের গভর্ণর সামাহ বিন মালেক
খাওলানী রাজধানী সেভিল থেকে কর্ডোভায়
স্থানান্তরিত করেন। এরপর এই
কর্ডোভা শতাব্দীর পর শতাব্দী স্পেনের
রাজধানী হিসাবে থেকে যায়।
এভাবে পযার্য়ক্রমে বৃহত্তর স্পেন
মুসলমানদের নেতৃত্বে চলে আসে।
ইসলামী শাসনের শাশ্বত সৌন্দর্য ও ন্যায়
বিচারে মুগ্ধ হয়ে হাযার হাযার মানুষ ইসলামের
ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।
সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-
সংস্কৃতি ও শিল্প-সভ্যতার
ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হ’তে থাকে।
এদিকে ইউরোপীয় খ্রীষ্টান রাজাদের
চক্ষুশূলের কারণ হয় মুসলমানদের এই
অগ্রগতি। ফলে ইউরোপীয় মাটি থেকে মুসলিম
শাসনের উচ্ছেদ চিন্তায় তারা ব্যাকুল
হয়ে উঠে। অতঃপর আরগুনের ফার্ডিন্যান্ড
এবং কাস্তালিয়ার পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা এই
দু’জনই চরম মুসলিম বিদ্বেষী খ্রীষ্টান
নেতা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
তাঁরা সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ
করে মুসলমানদের উপর আঘাত হানবার জন্য
মরিয়া হয়ে উঠে। তারা মুসলমানদের দুর্বলতার
সুযোগ খুঁজতে থাকে। এমন এক মুহূর্তে ১৪৮৩
সালে আবুল হাসানের পুত্র আবু আব্দিল্লাহ
বোয়াবদিল খ্রীষ্টান শহর লুসানা আক্রমণ
করে পরাজিত ও বন্দী হন। এবার ফার্ডিন্যান্ড
বন্দী বোয়াবদিলকে গ্রানাডা ধ্বংসের হাতিয়ার
হিসাবে ব্যবহার করে। একদল সৈন্য
দিয়ে বোয়াবদিলকে প্রেরণ করে তাঁরই পিতৃব্য
আল-জাগালের বিরুদ্ধে। বিশ্বাসঘাতক
বোয়াবদিল ফার্ডিন্যান্ডের
ধূর্তামি বুঝতে পারেননি এবং নিজেদের পতন
নিজেদের দ্বারাই সংঘটিত হবে এ কথা তখন
তার মনে জাগেনি। খ্রীষ্টানরাও উপযুক্ত
মওকা পেয়ে তাদের লক্ষ্যবস্ত্তর উপর
দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পরিকল্পনা কার্যকর
করতে থাকে। বোয়াবদিল গ্রানাডা আক্রমণ
করলে আজ-জাগাল উপায়ন্তর
না দেখে মুসলিম শক্তিকে টিকিয়ে রাখার
মানসেই বোয়াবদিলকে প্রস্তাব দেন যে,
গ্রানাডা তারা যুক্তভাবে শাসন করবেন
এবং সাধারণ শত্রুদের মোকাবেলার জন্য লড়াই
করতে থাকবেন। কিন্তু আজ-জাগালের দেয়া এ
প্রস্তাব অযোগ্য ও হতভাগ্য বোয়াবদিল
প্রত্যাখ্যান করেন। শুরু হয় উভয়ের
মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের এই
আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধের সুযোগ গ্রহণ করে গ্রাম-
গঞ্জের নিরীহ মুসলিম নারী-
পুরুষকে হত্যা করে গ্রামের পর গ্রাম
জ্বালিয়ে দিতে দিতে ছুটে আসে শহরের দিকে।
অতঃপর রাজধানী গ্রানাডা অবরোধ করে।
এতক্ষণে টনক নড়ে মুসলিম সেনাবাহিনীর।
তারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। তাতে ভড়কে যায়
সম্মিলিত কাপুরুষ খ্রীষ্টান বাহিনী। সম্মুখ
যুদ্ধে নির্ঘাত পরাজয় বুঝতে পেরে তারা ভিন্ন
পথ অবলম্বন করে। তারা আগুন
দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় শহরের বাইরের সকল শস্য
খামার এবং বিশেষ করে শহরের খাদ্য সরবরাহের
প্রধান উৎস ‘ভেগা’ উপত্যকা। ফলে অচিরেই
দুর্ভিক্ষ নেমে আসে শহরে।
খাদ্যাভাবে সেখানে হাহাকার দেখা দেয়। এই
সুযোগে প্রতারক খ্রীষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড
ঘোষণা করে, ‘মুসলমানেরা যদি শহরের প্রধান
ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায়
মসজিদে আশ্রয় নেয়,
তাহ’লে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে।
আর যারা খ্রীষ্টান জাহাজগুলোতে আশ্রয়
নিবে, তাদেরকে অন্যান্য মুসলিম
রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অন্যথা আমার
হাতে তোমাদেরকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে’।
দুর্ভিক্ষতাড়িত অসহায় নারী-পুরুষ ও মাছুম
বাচ্চাদের কচি মুখের দিকে তাকিয়ে মুসলিম
নেতৃবৃন্দ সেদিন খ্রীষ্টান নেতাদের
আশ্বাসে বিশ্বাস করে শহরের প্রধান ফটক
খুলে দেন ও সবাইকে নিয়ে আল্লাহ্র ঘর
মসজিদে আশ্রয় নেন।
কেউবা জাহাজগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
কিন্তু শহরে ঢুকে খ্রীষ্টান বাহিনী নিরস্ত্র
মুসলমানদেরকে মসজিদে আটকিয়ে বাহির
থেকে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়।
অতঃপর একযোগে সকল মসজিদে আগুন
লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে ফেটে পড়ে নরপশুরা।
আর জাহাজগুলোকে মাঝ দরিয়ায়
ডুবিয়ে দেয়া হয়। কেউ উইপোকার মত
আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে গেল, কারো হ’ল সলিল
সমাধি। প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধীভূত ৭
লক্ষাধিক অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুদের
আর্তচিৎকারে গ্রানাডার আকাশ-বাতাস যখন
ভারী ও শোকাতুর হয়ে উঠেছিল, তখন
হিংস্রতার নগ্নমূর্তি ফার্ডিন্যান্ড আনন্দের
আতিশয্যে স্ত্রী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে ক্রূর
হাসি হেসে বলতে থাকে, Oh! Muslim! How
fool you are! ‘হায় মুসলমান! তোমরা কত
বোকা’।
যেদিন এই হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক ও
লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছিল, সে দিনটি ছিল
১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল। সেদিন
থেকেই খ্রীষ্টান জগৎ প্রতি বছর ১লা এপ্রিল
সাড়ম্বরে পালন করে আসছে April fools Day
তথা ‘এপ্রিলের বোকা দিবস’ হিসাবে।
মুসলমানদের বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর
ধোঁকাবাজিকে স্মরণীয় করে রাখার
উদ্দেশ্যে সমগ্র ইউরোপে প্রতিবছর
১লা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ দিবস
হিসাবে পালিত হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে ঠান্ডা মাথার এই নিষ্ঠুর
প্রতারণা ও লোমহর্ষক নির্মম হত্যাকান্ডের
আর কোন নযীর নেই। কিন্তু এত বড়
ট্রাজেডীর পরেও আজ পর্যন্ত খ্রীষ্টান বিশ্ব
কখনোই অপরাধ বোধ করেনি।
বরং উল্টা তারা গত ১৯৯৩ সালের
১লা এপ্রিল তারিখে গ্রানাডা বিজয়ের পাঁচশ’
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্পেনের
রাজধানী মাদ্রিদে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্ব
নেতৃবৃন্দ আড়ম্বরপূর্ণ এক সভায় মিলিত
হয়ে নতুন করে শপথ গ্রহণ করে একচ্ছত্র
খ্রীষ্টীয় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার। বিশ্বব্যাপী মুসলিম
জাগরণ প্রতিহত করার জন্য
গড়ে তোলে ‘হলি মেরী ফান্ড’। বিশ্বের
বিভিন্ন খ্রীষ্টান রাষ্ট্র উক্ত ফান্ডে নিয়মিত
চাঁদা জমা করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার
জন্য বিশ্বব্যাপী গড়ে তুলেছে অর্থনৈতিক ও
সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক। আজ এই জঘন্য
উৎসব আমাদের মুসলমানদের জাতীয় জীবনেও
প্রবেশ করেছে। প্রতি বছর ইংরেজী মাসের
১লা এপ্রিল ভোরে উঠেই
একে অপরকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর
ন্যক্কারজনক কাজে শরীক হয়ে বেশ আনন্দ
উপভোগ করে থাকে ছেলে থেকে শুরু
করে বুড়ো পর্যন্ত অনেকে। লক্ষ্য করা যায়,
গ্রামে-গঞ্জে-শহরে শিক্ষিত-অশিক্ষিত,
স্বল্পশিক্ষিত এমনকি সর্বোচ্চ শিক্ষিত
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই
একে অপরকে নানাভাবে বিভিন্ন
কৌশলে বোকা বানিয়ে আনন্দ পায়।
শ্রেণীকক্ষের টেবিল-চেয়ার উল্টিয়ে, কলমের
নিব সরিয়ে ইত্যাদি বিবিধ কৌশলে শিক্ষকদের
বোকা বানানো হয়। আর শিক্ষক
কিংবা শিক্ষিকারাও একটু মুচকি হাসির
মাধ্যমে খুব সহজেই তা বরণ করে নেন। এ
দিনটিতে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য
প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, ছলনা ও মিথ্যা বলার
মাধ্যমে নিজেকে চালাক প্রমাণ করার
মানসে একশ্রেণীর মানুষকে খুব তৎপর
দেখা যায়। তারা ধোঁকার এই নাটক
রচনা করে প্রচুর কৌতুকও উপভোগ
করে থাকে। এই নিমর্ম কৌতুকের
কারণে প্রত্যেক বছর কত যে অপ্রীতিকর
ঘটনা ঘটছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই।
১লা এপ্রিলের ঐতিহাসিক ঐ হৃদয়বিদারক
ঘটনায় কার না মন শিউরে উঠে, কার না হৃদয়
কেঁদে উঠে। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে কোন
প্রতিক্রিয়া নেই, নেই কোন ভাবনা।
১লা এপ্রিলের ঘটনা স্মরণ
করে মুসলমানরা সতর্ক হবে, শিক্ষা নিবে এমন
কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং এর
উল্টো প্রভাবই বিরাজ করছে। ১লা এপ্রিল
অনেক মুসলিম অমুসলিমদের হাতে হাত
মিলিয়ে বিজাতীয় আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে।
খ্রীষ্টান সংগঠন এ দিনে যখন বিশেষ
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, তখন মুসলমানেরাও
তাতে অংশ নেয়। মুসলিম সমাজের জন্য এর
চেয়ে দুঃখ ও লজ্জার কারণ আর
কি হ’তে পারে? মুসলমানরা কেন ‘এপ্রিল ফুল’
দিবস পালন করবে? তারা কি ইতিহাস জানে না?
যদি ইতিহাস না জেনে পালন করা হয়,
তাহ’লে বলতে হবে, আমরা আসলেই বোকা।
কারণ না যেনে কেন একটা দিবস পালন করব?
আর যদি ইতিহাস জেনেই পালন করা হয়,
তাহ’লে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আমাদের মত
অনুভূতিহীন অসচেতন
জাতি গোটা বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই।
দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও যখন এরূপ
বোকা বানানোর সংস্কৃতি চোখে পড়ে, তখন
লজ্জায় বিস্মিত হ’তে হয়। কারণ উচ্চ
ডিগ্রী অন্বেষণকারী শিক্ষিত সমাজ কেন
গোলক ধাঁধায় পড়বে? এসব শিক্ষিতজনদের
নিকট থেকে এই দেশ ও জাতি কোন্
সংস্কৃতি শিক্ষা লাভ করবে? ১লা এপ্রিল
আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের
পূর্বপুরুষদের ৭৮০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল
স্পেনে মুসলিম সভ্যতার ইতিহাসের কথা,
খ্রীষ্টানদের প্রতারণার শিকার ৭ লক্ষাধিক
মুসলিম ভাই-বোনদের সর্বশেষ আর্তচিৎকারের
কথা, খৃষ্টানদের মুসলিম বিদ্বেষী মিশনের কথা,
মুসলিম নিধনের মর্মান্তিক ইতিহাসের কথা।
আজো ইতিহাসের সেই কালপিট ইহুদী-খ্রীষ্টান
জগতের নিমর্ম অত্যাচারের শিকার মুসলিম
জাতি ও মুসলিম বিশ্ব। তাদেরই হিংস্র
ছোবলে প্রতিনিয়ত হাযার হাযার মুসলমানের
জীবনের যবনিকাপাত ঘটছে। তাদেরই
ষড়যন্ত্রে অশান্তির দাবানল দাউদাউ
করে জ্বলছে ইরাকে, আফগানিস্তানে, কাশ্মীরে;
ফিলিস্তীনের মানুষ সদা-
সবর্দা রণক্ষেত্রে বসবাস করছে। তাদের
রক্তলোলুপ জিহবা এখন ইরানের
দিকে প্রসারিত। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম
পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র
পাকিস্তানে চলছে ড্রোন হামলা।
দেশে দেশে পাঠাচ্ছে তারা সাহয্যের
নামে তাদের এনজিও সমূহকে। পশ্চিমা দর্শন
চালান
করে একদিকে তারা ভাইয়ে ভাইয়ে হিংসা-
হানাহানির রাজনীতি চালু করেছে,
অন্যদিকে মানবাধিকার রক্ষা ও সন্ত্রাস
দমনের নামে মুসলিম দেশ সমূহে যুদ্ধ
চাপিয়ে দিচ্ছে। এদেরই পোষ্য একশ্রেণীর
মিডিয়ায় তথ্য সন্ত্রাস
করে আমাদেরকে ভুলেভরা ইতিহাস
শিক্ষা দিচ্ছে। এসব
থেকে জাতিকে বাঁচাতে জাতির সঠিক ইতিহাস
তাদেরকে জানানো অতি যরূরী। প্রয়োজন
তাদেরকে সজাগ ও সচেতন করা। বিজাতীয়
সভ্যতা-সংস্কৃতি ও তাদের
ষড়যন্ত্রকে অনুধাবন করে মুসলমানরা যেন
নিজেদের আদর্শের
দিকে ফিরে আসতে পারে সেজন্য যথাযথ
চেষ্টা করতে হবে।
পরিশেষে বলব, সবকিছু সুস্পষ্ট হওয়ার পরও
আমরা আর কতকাল বোকা হয়ে থাকব? অতএব
আসুন!
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিয়ে প্রথমে জানতে হবে,
১লা এপ্রিল কি? অতঃপর বিজাতীয় সংস্কৃতির
অনুসরণ পরিত্যাগ করে আমরা আমাদের
হারানো সভ্যতা, সংস্কৃতি ও
ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হই। আল্লাহ
আমাদের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

মৃতকে গোসল দেয়ার ইসলামী পদ্ধতি

মৃতকে গোসল দেয়ার ইসলামী পদ্ধতি

মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার ছালাত এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া। (অর্থাৎ কিছু লোকে কাজটি করলে অন্যরা দায়মুক্ত হবে। অন্যথা সকলেই গুনাহগার হবে) গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার পিতা। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয়। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হল তার ওছিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় মহিলাগণ। স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরকে গোসল দিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ) কে বলেন: “তোমার কোন অসুবিধা নেই, তুমি যদি আমার আগে মৃত্যু বরণ কর, তবে আমি তোমার গোসল দিব।” (আহমাদ, হাদীছ সহীহ্) আর আবু বকর (রাঃ) ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আবর্দু রাজ্জাক- হা/৬১৬৭)

মৃত ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ তার বয়স যদি সাত বছরের কম হয়, তবে যে কোন পুরুষ বা মহিলা তার গোসল দিতে পারবে। গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে (মুছে) দিবে। কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম। আল্লাহ্ বলেন: (ولاَ تُصَلِّ عَلىَ أحَدٍ مِنْهُمْ ماَتَ أبَداً) “আপনি তাদের (কাফের মুনাফেকদের) উপর কখনই জানাযা সালাত আদায় করবেন না।” (তওবাহ্- ৪৮)

গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অত:পর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (না তাকিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং সালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতর অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান সাইডের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে। তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে।

গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পুর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী করিম (সাঃ) তাঁর কন্যা যায়নাবের (রাঃ) শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

মৃতের মোচ বা নখ যদি বেশী বড় থাকে তবে তা কেটে দেয়া মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না। সাত বার গোসল দেয়ার পরও যদি পেট থেকে ময়লা (পেশাব বা পায়খানা) বের হতেই থাকে তবে উক্ত স্থান ধুয়ে সেখানে তুলা বা কাপড় জড়িয়ে দিবে। তারপর তাকে ওযু করাবে।

কাফন পরানোর পরও যদি ময়লা বের হয়, তবে আর গোসল না দিয়ে সেভাবেই রেখে দিবে। কেননা তা অসুবিধার ব্যাপার। মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুলগুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে। হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোন সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাঁকবে না। বিদায় হজ্জে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে নবী করিম (সাঃ) বলেন: “তাকে কোন সুগন্ধি লাগাবে না, এবং তার মাথা ঢাঁকবে না। কেননা সে ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না, এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা নবী (সাঃ) “ওহুদের শহীদদের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে গোসল ছাড়া তাদের পরিহিত কাপড়ে দাফন করা হবে।” (বুখারী) “এমনিভাবে তাদের ছালাতে জানাযাও পড়েন নি।” (বুখারী ও মুসলিম)
গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার ছালাত আদায় করবে। কেননা নবী করিম (সাঃ) বলেন: “মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস অতিক্রম করে তখন সেখানে একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।” (মুসলিম) আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি মাংশের টুকরা গণ্য হবে। যা কোন গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোন স্থানে মাটিতে পুঁতে দেয়া হবে।

মৃত ব্যক্তি আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খন্ড-বিখন্ড হওয়ার কারণে বা পানি না পওয়ার কারণে যদি তাকে গোসল দেয়া সম্ভব না হয়, তবে পূর্ব নিয়মে তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।