বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

হযরত ঈসা (আঃ) এর জীবনী থেকে (২য় খন্ড)

[] হযরত ঈসা (আঃ) এর
জীবনী থেকে (২য় খন্ড) []
ঈসা (আ:) এর জন্ম ও লালন-
পালন :
এভাবে মেহরাবে অবস্থান
করে মারিয়াম বায়তুল
মুক্বাদ্দাসের খিদমত
করতে থাকেন। সম্মানিত নবী ও
মারিয়ামের বয়োবৃদ্ধ খালু
যাকারিয়া (আঃ)
সর্বদা তাকে দেখাশুনা করতেন।
মেহরাবের উত্তর-পূর্বদিকে
সম্ভবতঃ খেজুর বাগান ও
ঝর্ণাধারা ছিল।
যেখানে মারিয়াম
পর্দা টাঙিয়ে মাঝে-
মধ্যে পায়চারি করতেন।
অভ্যাসমত তিনি উক্ত নির্জন
স্থানে একদিন
পায়চারি করছিলেন। এমন সময়
হঠাৎ মানুষের
বেশে সেখানে জিবরাঈল
উপস্থিত হন।
স্বাভাবিকভাবেই
তাতে মারিয়াম ভীত
হয়ে পড়েন। এ
বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ:
ْﺮُﻛْﺫﺍَﻭ ﻲِﻓ ِﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ َﻢَﻳْﺮَﻣ ْﺕَﺬَﺒَﺘﻧﺍ ِﺫِﺇ
ْﻦِﻣ ًﺎﻧﺎَﻜَﻣ ﺎَﻬِﻠْﻫَﺃ -ﺎًّﻴِﻗْﺮَﺷ ْﺕَﺬَﺨَّﺗﺎَﻓ
ﻦِﻣ ْﻢِﻬِﻧﻭُﺩ ًﺎﺑﺎَﺠِﺣ ﺎَﻨْﻠَﺳْﺭَﺄَﻓ ﺎَﻬْﻴَﻟِﺇ
ﺎَﻨَﺣﻭُﺭ َﻞَّﺜَﻤَﺘَﻓ ﺎَﻬَﻟ -ﺎًّﻳِﻮَﺳ ﺍًﺮَﺸَﺑ ْﺖَﻟﺎَﻗ
ﻲِّﻧِﺇ ُﺫﻮُﻋَﺃ ﻦَﻤْﺣَّﺮﻟﺎِﺑ َﻚﻨِﻣ َﺖﻨُﻛ ﻥِﺇ
-ﺎًّﻴِﻘَﺗ ﺎَﻤَّﻧِﺇ َﻝﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ﺎَﻧَﺃ ِﻚِّﺑَﺭ َﺐَﻫَﺄِﻟ
ﺎًﻣَﻼُﻏ ِﻚَﻟ -ﺎًّﻴِﻛَﺯ ْﺖَﻟﺎَﻗ ُﻥﻮُﻜَﻳ ﻰَّﻧَﺃ
ﻲِﻟ ٌﻡَﻼُﻏ ٌﺮَﺸَﺑ ﻲِﻨْﺴَﺴْﻤَﻳ ْﻢَﻟَﻭ ْﻢَﻟَﻭ
ُﻙَﺃ -ﺎًّﻴِﻐَﺑ َﻝﺎَﻗ ِﻚِﻟَﺬَﻛ ِﻚُّﺑَﺭ َﻝﺎَﻗ َﻮُﻫ
ُﻪَﻠَﻌْﺠَﻨِﻟَﻭ ٌﻦِّﻴَﻫ َّﻲَﻠَﻋ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ ًﺔَﻳﺁ
ًﺔَﻤْﺣَﺭَﻭ ﺎَّﻨِّﻣ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺍًﺮْﻣَﺃ -ﺎًّﻴِﻀْﻘَّﻣ
ﻢﻳﺮﻣ) ১৬-২১)-
(হে মুহাম্মাদ!) ‘আপনি এই
কিতাবে মারিয়ামের
কথা বর্ণনা করুন। যখন সে তার
পরিবারের লোকজন হ’তে পৃথক
হয়ে পূর্বদিকে একস্থানে আশ্রয়
নিল’ (মারিয়াম ১৬)। ‘অতঃপর
সে তাদের থেকে আড়াল করার
জন্য পর্দা টাঙিয়ে নিল।
অতঃপর আমরা তার
নিকটে আমাদের ‘রূহ’ (অর্থাৎ
জিব্রীলকে) প্রেরণ করলাম।
সে তার কাছে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ
মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ
করল’ (১৭)। ‘মারিয়াম বলল,
আমি তোমার থেকে করুণাময়
আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি,
যদি তুমি আল্লাহভীরু হও’ (১৮)।
‘সে বলল, আমি তো কেবল তোমার
প্রভুর প্রেরিত। এজন্য যে,
আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র
সন্তান দান করে যাব’ (১৯)।
‘মারিয়াম বলল, কিভাবে আমার
পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন
মানুষ আমাকে স্পর্শ
করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণী নই’ (২০)।
‘সে বলল, এভাবেই হবে। তোমার
পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার
জন্য সহজ ব্যাপার
এবং আমরা তাকে (ঈসাকে)
মানবজাতির জন্য
একটা নিদর্শন ও আমাদের পক্ষ
হ’তে বিশেষ
অনুগ্রহরূপে পয়দা করতে চাই।
তাছাড়া এটা (পূর্ব থেকেই)
নির্ধারিত বিষয়’ (মারিয়াম
১৯/১৬-২১)। অতঃপর জিব্রীল
মারিয়ামের মুখে অথবা তাঁর
পরিহিত জামায় ফুঁক মারলেন
এবং তাতেই তাঁর গর্ভ সঞ্চার
হ’ল (আম্বিয়া ২১/৯১; তাহরীম
৬৬/১২)।
অন্য আয়াতে একে ‘আল্লাহর
কলেমা’ ( ٍﺔَﻤِﻠَﻜِﺑ ُﻪْﻨِﻣ ) অর্থাৎ
‘কুন্’ (হও)
বলা হয়েছে(আলে ইমরান
৩/৪৫)।
অতঃপর আল্লাহ বলেন,
ُﻪْﺘَﻠَﻤَﺤَﻓ ﺎًﻧﺎَﻜَﻣ ِﻪِﺑ ْﺕَﺬَﺒَﺘﻧﺎَﻓ -ﺎًّﻴِﺼَﻗ
ﺎَﻫﺀﺎَﺟَﺄَﻓ ُﺽﺎَﺨَﻤْﻟﺍ ِﻉْﺬِﺟ ﻰَﻟِﺇ ِﺔَﻠْﺨَّﻨﻟﺍ
ْﺖَﻟﺎَﻗ ﺎَﻳ ﻲِﻨَﺘْﻴَﻟ ُّﺖِﻣ َﻞْﺒَﻗ ﺍَﺬَﻫ ُﺖﻨُﻛَﻭ
ﺎًﻴْﺴَﻧ -ﺎًّﻴِﺴْﻨَّﻣ ﺎَﻫﺍَﺩﺎَﻨَﻓ ْﻦِﻣ َّﻻَﺃ ﺎَﻬِﺘْﺤَﺗ
ﻲِﻧَﺰْﺤَﺗ ِﻚُّﺑَﺭ َﻞَﻌَﺟ ْﺪَﻗ ِﻚَﺘْﺤَﺗ -ﺎًّﻳِﺮَﺳ
ْﻱِّﺰُﻫَﻭ ِﻚْﻴَﻟِﺇ ِﻉْﺬِﺠِﺑ ِﺔَﻠْﺨَّﻨﻟﺍ ْﻂِﻗﺎَﺴُﺗ
ِﻚْﻴَﻠَﻋ ﺎًﺒَﻃُﺭ -ﺎًّﻴِﻨَﺟ ْﻲِﻠُﻜَﻓ ْﻲِﺑَﺮْﺷﺍَﻭ
ْﻱِّﺮَﻗَﻭ ﺎًﻨْﻴَﻋ َّﻦِﻳَﺮَﺗ ﺎَّﻣِﺈَﻓ ِﺮَﺸَﺒْﻟﺍ َﻦِﻣ
ﺍًﺪَﺣَﺃ ْﻲِﻟﻮُﻘَﻓ ْﻲِّﻧِﺇ ِﻦَﻤْﺣَّﺮﻠِﻟ ُﺕْﺭَﺬَﻧ
ْﻦَﻠَﻓ ًﺎﻣْﻮَﺻ َﻡْﻮَﻴْﻟﺍ َﻢِّﻠَﻛُﺃ -ﺎًّﻴِﺴﻧِﺇ
ﻢﻳﺮﻣ) ২২-২৬)-
‘অতঃপর মারিয়াম গর্ভে সন্তান
ধারণ করল এবং তৎসহ একটু
দূরবর্তী স্থানে চলে গেল’(মারিয়াম
২২)। ‘এমতাবস্থায় প্রসব
বেদনা তাকে একটি খর্জুর
বৃক্ষের মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য
করল। তখন সে বলল, হায়!
আমি যদি এর আগেই
মারা যেতাম
এবং আমি যদি মানুষের
স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত
হয়ে যেতাম’ (২৩)। ‘এমন সময়
ফেরেশতা তাকে নিম্নদেশ
থেকে (অর্থাৎ
পার্শ্ববর্তী নিম্নভূমি থেকে)
আওয়ায দিয়ে বলল, তুমি দুঃখ
করো না। তোমার
পালনকর্তা তোমার
পাদদেশে একটি ঝর্ণাধারা সৃষ্টি করেছেন’ (২৪)।
‘আর তুমি খর্জুর বৃক্ষের কান্ড
ধরে নিজের দিকে নাড়া দাও,
তা থেকে তোমার দিকে সুপক্ক
খেজুর পতিত হবে’ (২৫)।
‘তুমি আহার কর, পান কর
এং স্বীয় চক্ষু শীতল কর। আর
যদি কোন মানুষকে তুমি দেখ,
তবে তাকে বলে দিয়ো যে,
আমি দয়াময় আল্লাহর জন্য
ছিয়াম পালনের মানত করেছি।
সুতরাং আমি আজ কারু সাথে কোন
মতেই কথা বলব না’ (মারিয়াম
১৯/২২-২৬)।
উল্লেখ্য যে, ইসলাম-পূর্ব
কালের বিভিন্ন
শরী‘আতে সম্ভবতঃ ছিয়াম
পালনের সাথে অন্যতম নিয়ম
ছিল সারাদিন মৌনতা অবলম্বন
করা। হযরত যাকারিয়া (আঃ)-
কেও সন্তান প্রদানের নিদর্শন
হিসাবে তিন দিন ছিয়ামের
সাথে মৌনতা অবলম্বনের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
তবে ঐ অবস্থায় ইশারা-
ইঙ্গিতে কথা বলার অবকাশ ছিল
(মারিয়াম ১৯/১০-১১)।
একইভাবে মারিয়ামকেও
নির্দেশ দেওয়া হ’ল (মারিয়াম
১৯/২৬)।
আলোচনা :
(১) যেহেতু ঈসা (আঃ)-এর
জন্মগ্রহণের
ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে অলৌকিক,
তাই তার গর্ভধারণের মেয়াদ
স্বাভাবিক নিয়মের বহির্ভূত
ছিল বলেই ধরে নিতে হবে। আর
এটা আল্লাহর জন্য একেবারেই
সাধারণ বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর
মাধ্যমে সন্তান জন্ম হবে,
মাকে দশ মাস গর্ভধারণ
করতে হবে ইত্যাদি নিয়ম
আল্লাহরই সৃষ্টি এবং এই নিয়ম
ভেঙ্গে সন্তান দান করাও তাঁরই
এখতিয়ার। এদিকে ইঙ্গিত
করেই আল্লাহ বলেন,
َﻞَﺜَﻣ َّﻥِﺇ ﻰَﺴْﻴِﻋ َﺪْﻨِﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻞَﺜَﻤَﻛ َﻡَﺩﺁ
ُﻪَﻘَﻠَﺧ ٍﺏﺍَﺮُﺗ ْﻦِﻣ َﻝﺎَﻗ َّﻢُﺛ ْﻦُﻛ ُﻪَﻟ
-ُﻥْﻮُﻜَﻴَﻓ ﻦِﻣ ُّﻖَﺤْﻟﺍ َﻼَﻓ َﻚِّﺑَّﺭ َﻦِّﻣ ﻦُﻜَﺗ
-َﻦْﻳِﺮَﺘْﻤُﻤْﻟﺍ ﻝﺁ) ﻥﺍﺮﻤﻋ ৫৯-৬০)-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে ঈসার
দৃষ্টান্ত হ’ল আদমের মত।
তাকে তিনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন
এবং বলেন, হয়ে যাও ব্যস
হয়ে গেল’। ‘যা তোমার প্রভু
আল্লাহ বলেন, সেটাই সত্য।
অতএব তুমি সংশয়বাদীদের
অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান
৩/৫৯-৬০)।
অর্থাৎ আদমকে যেমন পিতা-
মাতা ছাড়াই
সৃষ্টি করা হয়েছে,
ঈসাকে তেমনি পিতা ছাড়াই শুধু
মায়ের মাধ্যমেই
সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এটাই
যে সত্য এবং এর
বাইরে যাবতীয় জল্পনা-
কল্পনা যে মিথ্যা, সে কথাও
উপরোক্ত
আয়াতে দ্ব্যর্থহীনভাবে
বলে দেওয়া হয়েছে।
দুর্ভাগ্য এই যে, যে বনু
ইস্রাঈলের নবী ও রাসূল
হয়ে ঈসা (আঃ)-এর আগমন ঘটলো,
সেই ইহুদী-নাছারারাই
আল্লাহর উক্ত
ঘোষণাকে মিথ্যা বলে গণ্য
করেছে। অথচ এই
হতভাগারা মারিয়ামের
পূর্বদিকে যাওয়ার
অনুসরণে পূর্বদিককে তাদের
ক্বিবলা বানিয়েছে।
(১) এখানে আরেকটি বিষয়
লক্ষণীয় যে, মারিয়ামকে খেজুর
গাছের কান্ড
ধরে নাড়া দিতে বলা হয়েছে,
যাতে সুপক্ক খেজুর নীচে পতিত
হয়। এটাতে বুঝা যায় যে,
ওটা ছিল তখন খেজুর পাকার
মৌসুম অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। আর
খৃষ্টানরা কথিত যীশু খৃষ্টের
জন্মদিন তথা তাদের ভাষায় X-
mas Day বা বড় দিন উৎসব
পালন
করে থাকে শীতকালে ২৫শে ডিসেম্বর
তারিখে। অথচ এর কোন
ভিত্তি তাদের কাছে নেই।
(২) এখানে আরেকটি বিষয়
লক্ষণীয় যে, খেজুর গাছের
গোড়া ধরে নাড়া দেওয়া কখনোই
সম্ভব নয়। বিশেষ করে একজন
সদ্য প্রসূত সন্তানের মায়ের
পক্ষে। এর মধ্যে এ
বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে,
নেকীর কাজে আল্লাহর
উপরে ভরসা করে বান্দাকে অবশ্যই
এগিয়ে যেতে হবে। যত
সামান্যই হৌক কাজ করতে হবে।
আল্লাহ তাতেই বরকত দিবেন।
যেমন তালূত ও দাঊদকে আল্লাহ
দিয়েছিলেন এবং যেমন
শেষনবী (ছাঃ)-কে আল্লাহ
সাহায্য করেছিলেন
বিশেষভাবে হিজরতের
রাত্রিতে মক্কা ত্যাগের সময়,
হিজরতকালীন সফরে এবং বদর ও
খন্দক যুদ্ধের কঠিন সময়ে।

হযরত ঈসা (আঃ) এর জীবনী থেকে (১ম খন্ড)

[] হযরত ঈসা (আঃ) এর
জীবনী থেকে (১ম খন্ড) []
হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনু
ইস্রাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও
কিতাবধারী রাসূল।
তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত
হয়েছিলেন। তাঁরপর
থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-
এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন
নবী আগমন করেননি। এই
সময়টাকে ﺓﺮﺘﻓ ﻞﺳﺮﻟﺍ বা ‘রাসূল
আগমনের বিরতিকাল’ বলা হয়।
ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার
অব্যবহিত কাল পূর্বে হযরত
ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পুনরায়
পৃথিবীতে অবতরণ করবেন
এবং মুহাম্মাদী শরী‘আত
অনুসরণে ইমাম মাহদীর
নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির
রাজ্য কায়েম করবেন।
তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর
সাথে বিশ্ব
সংস্কারে ব্রতী হবেন। তাই
তাঁর সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত
ধারণা দেওয়া অত্যন্ত
যরূরী বিবেচনা করে আল্লাহ
পাক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-
এর
মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, মূসা (আঃ)-এর
অনুসারী হওয়ার দাবীদার
ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই
স্বীকারই করেনি।
অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও
অনুসারী হবার দাবীদার
খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে ‘আল্লাহর
পুত্র’ (তওবাহ ৯/৩০)
বানিয়েছে’। অথচ এরূপ
ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহ
দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’
বলে ঘোষণা করেছেন (মায়েদাহ
৫/৭২-৭৩)। কুরআন তাঁর
সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন
করেছে। আমরা এখন
সেদিকে মনোনিবেশ করব।
উল্লেখ্য যে, হযরত ঈসা (আঃ)
সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট
১৫টি সূরায় ৯৮টি আয়াতে[1]
বর্ণিত হয়েছে।
ঈসার মা ও নানী :
ঈসা (আঃ)-এর
আলোচনা করতে গেলে তাঁর মা ও
নানীর আলোচনা আগেই
করে নিতে হয়। কারণ তাঁদের
ঘটনাবলীর সাথে ঈসার
জীবনের গভীর যোগসূত্র
রয়েছে।
পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের
শরী‘আতে প্রচলিত ইবাদত-
পদ্ধতির মধ্যে আল্লাহর
নামে সন্তান উৎসর্গ করার
রেওয়াজও চালু ছিল। এসব
উৎসর্গীত সন্তানদের পার্থিব
কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হ’ত
না। এ পদ্ধতি অনুযায়ী ঈসার
নানী অর্থাৎ ত ইমরানের
স্ত্রী নিজের গর্ভস্থ সন্তান
সম্পর্কে মানত করলেন যে,
তাকে বিশেষভাবে আল্লাহর ঘর
বায়তুল মুক্বাদ্দাসের
খিদমতে নিয়োজিত করা হবে।
তিনি ভেবেছিলেন যে পুত্র
সন্তান হবে। কিন্তু যখন
তিনি কন্যা সন্তান প্রসব
করলেন, তখন আক্ষেপ
করে বললেন, ‘হে আল্লাহ!
আমি কন্যা প্রসব করেছি’?
(আলে ইমরান ৩৬)। অর্থাৎ
একে দিয়ে তো আমার মানত পূর্ণ
হবে না। কিন্তু আল্লাহর
ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ। তিনি উক্ত
কন্যাকেই কবুল করে নেন।
বস্ত্ততঃ ইনিই ছিলেন
মারিয়াম বিনতে ইমরান,
যিনি ঈসা (আঃ)-এর
কুমারী মাতা ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
যাকে জান্নাতের শ্রেষ্ঠ
চারজন মহিলার অন্যতম
হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
যেমন তিনি বলেন,
ُﻞﻀﻓﺃ ِﺀﺎﺴﻧ ِﺖﻨﺠﻟﺍ ِﻞﻫﺃ ُﺖﺠﻳﺪﺧ
ِﺪﻠْﻳَﻮُﺧ ِﺖﻨﺑ ِﺖﻨﺑ ُﺔﻤﻃﺎﻓﻭ ٍﺪﻤﺤﻣ
ــــــــــــُﻤﻳﺮﻣﻭ
‘জান্নাতবাসী মহিলাগণের
মধ্যে সেরা হ’লেন চারজন:
খাদীজা বিনতে খুওয়ালিদ,
ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ,
মারিয়াম বিনতে ইমরান
এবং আসিয়া বিনতে মুযাহিম,
যিনি ফেরাঊনের স্ত্রী’।
মারিয়ামের জন্ম ও লালন-
পালন :
মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালন
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
ْﺫِﺇ ِﺖَﻟﺎَﻗ ُﺓَﺃَﺮْﻣﺍ َﻥﺍَﺮْﻤِﻋ ﻲِّﻧِﺇ ِّﺏَﺭ ُﺕْﺭَﺬَﻧ
ﺎَﻣ َﻚَﻟ ْﻲِﻓ ًﺍﺭَّﺮَﺤُﻣ ْﻲِﻨْﻄَﺑ ْﻞَّﺒَﻘَﺘَﻓ
ﻲِّﻨِﻣ َﻚَّﻧِﺇ َﺖﻧَﺃ ﺎَّﻤَﻠَﻓ -ُﻢﻴِﻠَﻌْﻟﺍ ُﻊﻴِﻤَّﺴﻟﺍ
ﺎَﻬْﺘَﻌَﺿَﻭ ْﺖَﻟﺎَﻗ ِّﺏَﺭ ﺎَﻬُﺘْﻌَﺿَﻭ ﻲِّﻧِﺇ
ﻰَﺜﻧُﺃ ُﻪﻠﻟﺍَﻭ ْﺖَﻌَﺿَﻭ ﺎَﻤِﺑ ُﻢَﻠْﻋَﺃ َﺲْﻴَﻟَﻭ
ُﺮَﻛَّﺬﻟﺍ ﺎَﻬُﺘْﻴَّﻤَﺳ ﻲِّﻧِﺇَﻭ ﻰَﺜﻧُﻷﺎَﻛ َﻢَﻳْﺮَﻣ
ﺎَﻫُﺬْﻴِﻋُﺃ ﻲِّﻧِﺇِﻭ َﻚِﺑ َﻦِﻣ ﺎَﻬَﺘَّﻳِّﺭُﺫَﻭ
ِﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ ﺎَﻬَﻠَّﺒَﻘَﺘَﻓ -ِﻢﻴِﺟَّﺮﻟﺍ ﺎَﻬُّﺑَﺭ
ٍﻝﻮُﺒَﻘِﺑ ﺎَﻬَﺘَﺒﻧَﺃَﻭ ٍﻦَﺴَﺣ ًﺎﻨَﺴَﺣ ًﺎﺗﺎَﺒَﻧ
ﺎَﻬَﻠَّﻔَﻛَﻭ ،ﺎَّﻳِﺮَﻛَﺯ ﺎَﻤَّﻠُﻛ َﻞَﺧَﺩ ﺎَﻬْﻴَﻠَﻋ
َﺏﺍَﺮْﺤِﻤْﻟﺍ ﺎَّﻳِﺮَﻛَﺯ ﺎَﻫَﺪﻨِﻋ َﺪَﺟَﻭ ًﺎﻗْﺯِﺭ َﻝﺎَﻗ
ﺎَﻳ ُﻢَﻳْﺮَﻣ ﻰَّﻧَﺃ ِﻚَﻟ ﺍَﺬـَﻫ ْﺖَﻟﺎَﻗ َﻮُﻫ
ْﻦِﻣ ِﺪﻨِﻋ َّﻥﺇ ِﻪﻠﻟﺍ ُﻕُﺯْﺮَﻳ َﻪﻠﻟﺍ ُﺀﺂَﺸََّﻳ ْﻦَﻣ
-ٍﺏﺎَﺴِﺣ ِﺮْﻴَﻐِﺑ ﻝﺁ) ﻥﺍﺮﻤﻋ ৩৫-৩৭)-
‘যখন ইমরানের স্ত্রী বলল,
হে আমার প্রভু! আমার
গর্ভে যা রয়েছে তাকে আমি তোমার
নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ
থেকে মুক্ত হিসাবে। অতএব
আমার পক্ষ
থেকে তুমি তাকে কবুল
করে নাও। নিশ্চয়ই
তুমি সর্বশ্রোতা ও
সর্বজ্ঞ’ (আলে ইমরান ৩৫)।
‘অতঃপর সে যখন তাকে প্রসব
করল, তখন বলল, হে প্রভু!
আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব
করেছি! অথচ আল্লাহ ভাল করেই
জানেন, সে কি প্রসব করেছে।
(আল্লাহ
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,) এই
কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই।
আর আমি তার নাম রাখলাম
‘মারিয়াম’। (মারিয়ামের
মা দো‘আ করে বলল, হে আল্লাহ!)
আমি তাকে ও তার
সন্তানদেরকে তোমার
আশ্রয়ে সমর্পণ করছি, অভিশপ্ত
শয়তানের কবল হ’তে’ (৩৬)।
আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তার প্রভু
তাকে উত্তমভাবে গ্রহণ
করে নিলেন
এবং তাকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন
সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর
তিনি তাকে যাকারিয়ার
তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করলেন।
(অতঃপর ঘটনা হ’ল এই যে,)
যখনই যাকারিয়া মেহরাবের
মধ্যে তার কাছে আসতেন, তখনই
কিছু খাদ্য দেখতে পেতেন।
তিনি জিজ্ঞেস করতেন,
মারিয়াম! এসব
কোথা থেকে তোমার কাছে এল?
মারিয়াম বলত, ‘এসব আল্লাহর
নিকট থেকে আসে। নিশ্চয়ই
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব
রিযিক দান
করে থাকেন’ (আলে ইমরান
৩/৩৫-৩৭)।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর
নামে উৎসর্গীত সন্তান পালন
করাকে তখনকার সময়ে খুবই
পুণ্যের কাজ মনে করা হ’ত। আর
সেকারণে মারিয়ামকে প্রতিপালনের
দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রীতিমত
প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
ফলে লটারীর ব্যবস্থা করা হয়
এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর
বয়োবৃদ্ধ নবী হযরত
যাকারিয়া (আঃ) মারিয়ামের
দায়িত্বপ্রাপ্ত হন (আলে ইমরান
৩/৪৪)।