বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

হযরত ঈসা (আঃ) এর জীবনী থেকে (১ম খন্ড)

[] হযরত ঈসা (আঃ) এর
জীবনী থেকে (১ম খন্ড) []
হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনু
ইস্রাঈল বংশের সর্বশেষ নবী ও
কিতাবধারী রাসূল।
তিনি ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত
হয়েছিলেন। তাঁরপর
থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-
এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন
নবী আগমন করেননি। এই
সময়টাকে ﺓﺮﺘﻓ ﻞﺳﺮﻟﺍ বা ‘রাসূল
আগমনের বিরতিকাল’ বলা হয়।
ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার
অব্যবহিত কাল পূর্বে হযরত
ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পুনরায়
পৃথিবীতে অবতরণ করবেন
এবং মুহাম্মাদী শরী‘আত
অনুসরণে ইমাম মাহদীর
নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির
রাজ্য কায়েম করবেন।
তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর
সাথে বিশ্ব
সংস্কারে ব্রতী হবেন। তাই
তাঁর সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তৃত
ধারণা দেওয়া অত্যন্ত
যরূরী বিবেচনা করে আল্লাহ
পাক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-
এর
মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, মূসা (আঃ)-এর
অনুসারী হওয়ার দাবীদার
ইহুদীরা তাঁকে নবী বলেই
স্বীকারই করেনি।
অন্যদিকে ঈসা (আঃ)-এর ভক্ত ও
অনুসারী হবার দাবীদার
খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে ‘আল্লাহর
পুত্র’ (তওবাহ ৯/৩০)
বানিয়েছে’। অথচ এরূপ
ধারণা পোষণকারীদের আল্লাহ
দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘কাফের’
বলে ঘোষণা করেছেন (মায়েদাহ
৫/৭২-৭৩)। কুরআন তাঁর
সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন
করেছে। আমরা এখন
সেদিকে মনোনিবেশ করব।
উল্লেখ্য যে, হযরত ঈসা (আঃ)
সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট
১৫টি সূরায় ৯৮টি আয়াতে[1]
বর্ণিত হয়েছে।
ঈসার মা ও নানী :
ঈসা (আঃ)-এর
আলোচনা করতে গেলে তাঁর মা ও
নানীর আলোচনা আগেই
করে নিতে হয়। কারণ তাঁদের
ঘটনাবলীর সাথে ঈসার
জীবনের গভীর যোগসূত্র
রয়েছে।
পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের
শরী‘আতে প্রচলিত ইবাদত-
পদ্ধতির মধ্যে আল্লাহর
নামে সন্তান উৎসর্গ করার
রেওয়াজও চালু ছিল। এসব
উৎসর্গীত সন্তানদের পার্থিব
কোন কাজকর্মে নিযুক্ত করা হ’ত
না। এ পদ্ধতি অনুযায়ী ঈসার
নানী অর্থাৎ ত ইমরানের
স্ত্রী নিজের গর্ভস্থ সন্তান
সম্পর্কে মানত করলেন যে,
তাকে বিশেষভাবে আল্লাহর ঘর
বায়তুল মুক্বাদ্দাসের
খিদমতে নিয়োজিত করা হবে।
তিনি ভেবেছিলেন যে পুত্র
সন্তান হবে। কিন্তু যখন
তিনি কন্যা সন্তান প্রসব
করলেন, তখন আক্ষেপ
করে বললেন, ‘হে আল্লাহ!
আমি কন্যা প্রসব করেছি’?
(আলে ইমরান ৩৬)। অর্থাৎ
একে দিয়ে তো আমার মানত পূর্ণ
হবে না। কিন্তু আল্লাহর
ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ। তিনি উক্ত
কন্যাকেই কবুল করে নেন।
বস্ত্ততঃ ইনিই ছিলেন
মারিয়াম বিনতে ইমরান,
যিনি ঈসা (আঃ)-এর
কুমারী মাতা ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
যাকে জান্নাতের শ্রেষ্ঠ
চারজন মহিলার অন্যতম
হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
যেমন তিনি বলেন,
ُﻞﻀﻓﺃ ِﺀﺎﺴﻧ ِﺖﻨﺠﻟﺍ ِﻞﻫﺃ ُﺖﺠﻳﺪﺧ
ِﺪﻠْﻳَﻮُﺧ ِﺖﻨﺑ ِﺖﻨﺑ ُﺔﻤﻃﺎﻓﻭ ٍﺪﻤﺤﻣ
ــــــــــــُﻤﻳﺮﻣﻭ
‘জান্নাতবাসী মহিলাগণের
মধ্যে সেরা হ’লেন চারজন:
খাদীজা বিনতে খুওয়ালিদ,
ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ,
মারিয়াম বিনতে ইমরান
এবং আসিয়া বিনতে মুযাহিম,
যিনি ফেরাঊনের স্ত্রী’।
মারিয়ামের জন্ম ও লালন-
পালন :
মারিয়ামের জন্ম ও লালন-পালন
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
ْﺫِﺇ ِﺖَﻟﺎَﻗ ُﺓَﺃَﺮْﻣﺍ َﻥﺍَﺮْﻤِﻋ ﻲِّﻧِﺇ ِّﺏَﺭ ُﺕْﺭَﺬَﻧ
ﺎَﻣ َﻚَﻟ ْﻲِﻓ ًﺍﺭَّﺮَﺤُﻣ ْﻲِﻨْﻄَﺑ ْﻞَّﺒَﻘَﺘَﻓ
ﻲِّﻨِﻣ َﻚَّﻧِﺇ َﺖﻧَﺃ ﺎَّﻤَﻠَﻓ -ُﻢﻴِﻠَﻌْﻟﺍ ُﻊﻴِﻤَّﺴﻟﺍ
ﺎَﻬْﺘَﻌَﺿَﻭ ْﺖَﻟﺎَﻗ ِّﺏَﺭ ﺎَﻬُﺘْﻌَﺿَﻭ ﻲِّﻧِﺇ
ﻰَﺜﻧُﺃ ُﻪﻠﻟﺍَﻭ ْﺖَﻌَﺿَﻭ ﺎَﻤِﺑ ُﻢَﻠْﻋَﺃ َﺲْﻴَﻟَﻭ
ُﺮَﻛَّﺬﻟﺍ ﺎَﻬُﺘْﻴَّﻤَﺳ ﻲِّﻧِﺇَﻭ ﻰَﺜﻧُﻷﺎَﻛ َﻢَﻳْﺮَﻣ
ﺎَﻫُﺬْﻴِﻋُﺃ ﻲِّﻧِﺇِﻭ َﻚِﺑ َﻦِﻣ ﺎَﻬَﺘَّﻳِّﺭُﺫَﻭ
ِﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ ﺎَﻬَﻠَّﺒَﻘَﺘَﻓ -ِﻢﻴِﺟَّﺮﻟﺍ ﺎَﻬُّﺑَﺭ
ٍﻝﻮُﺒَﻘِﺑ ﺎَﻬَﺘَﺒﻧَﺃَﻭ ٍﻦَﺴَﺣ ًﺎﻨَﺴَﺣ ًﺎﺗﺎَﺒَﻧ
ﺎَﻬَﻠَّﻔَﻛَﻭ ،ﺎَّﻳِﺮَﻛَﺯ ﺎَﻤَّﻠُﻛ َﻞَﺧَﺩ ﺎَﻬْﻴَﻠَﻋ
َﺏﺍَﺮْﺤِﻤْﻟﺍ ﺎَّﻳِﺮَﻛَﺯ ﺎَﻫَﺪﻨِﻋ َﺪَﺟَﻭ ًﺎﻗْﺯِﺭ َﻝﺎَﻗ
ﺎَﻳ ُﻢَﻳْﺮَﻣ ﻰَّﻧَﺃ ِﻚَﻟ ﺍَﺬـَﻫ ْﺖَﻟﺎَﻗ َﻮُﻫ
ْﻦِﻣ ِﺪﻨِﻋ َّﻥﺇ ِﻪﻠﻟﺍ ُﻕُﺯْﺮَﻳ َﻪﻠﻟﺍ ُﺀﺂَﺸََّﻳ ْﻦَﻣ
-ٍﺏﺎَﺴِﺣ ِﺮْﻴَﻐِﺑ ﻝﺁ) ﻥﺍﺮﻤﻋ ৩৫-৩৭)-
‘যখন ইমরানের স্ত্রী বলল,
হে আমার প্রভু! আমার
গর্ভে যা রয়েছে তাকে আমি তোমার
নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ
থেকে মুক্ত হিসাবে। অতএব
আমার পক্ষ
থেকে তুমি তাকে কবুল
করে নাও। নিশ্চয়ই
তুমি সর্বশ্রোতা ও
সর্বজ্ঞ’ (আলে ইমরান ৩৫)।
‘অতঃপর সে যখন তাকে প্রসব
করল, তখন বলল, হে প্রভু!
আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব
করেছি! অথচ আল্লাহ ভাল করেই
জানেন, সে কি প্রসব করেছে।
(আল্লাহ
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,) এই
কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই।
আর আমি তার নাম রাখলাম
‘মারিয়াম’। (মারিয়ামের
মা দো‘আ করে বলল, হে আল্লাহ!)
আমি তাকে ও তার
সন্তানদেরকে তোমার
আশ্রয়ে সমর্পণ করছি, অভিশপ্ত
শয়তানের কবল হ’তে’ (৩৬)।
আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তার প্রভু
তাকে উত্তমভাবে গ্রহণ
করে নিলেন
এবং তাকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন
সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর
তিনি তাকে যাকারিয়ার
তত্ত্বাবধানে সমর্পণ করলেন।
(অতঃপর ঘটনা হ’ল এই যে,)
যখনই যাকারিয়া মেহরাবের
মধ্যে তার কাছে আসতেন, তখনই
কিছু খাদ্য দেখতে পেতেন।
তিনি জিজ্ঞেস করতেন,
মারিয়াম! এসব
কোথা থেকে তোমার কাছে এল?
মারিয়াম বলত, ‘এসব আল্লাহর
নিকট থেকে আসে। নিশ্চয়ই
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব
রিযিক দান
করে থাকেন’ (আলে ইমরান
৩/৩৫-৩৭)।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর
নামে উৎসর্গীত সন্তান পালন
করাকে তখনকার সময়ে খুবই
পুণ্যের কাজ মনে করা হ’ত। আর
সেকারণে মারিয়ামকে প্রতিপালনের
দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রীতিমত
প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।
ফলে লটারীর ব্যবস্থা করা হয়
এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর
বয়োবৃদ্ধ নবী হযরত
যাকারিয়া (আঃ) মারিয়ামের
দায়িত্বপ্রাপ্ত হন (আলে ইমরান
৩/৪৪)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন