বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৩

নবী করীম (সাঃ) এর জীবনের শেষ দিনের বর্ননা ঃ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর জীবনের শেষ দিন :
সোমবার ফজরের জামা‘আত চলা অবস্থায় আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ) ঘরের পর্দাউঠিয়ে একদৃষ্টে মসজিদের জামা‘আতের
দিকে তাকিয়ে থাকেন। এতে তাঁর চেহারা খুশীতে উজ্জ্বল
হয়ে ওঠে এবং ঠোটে মুচকি হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
রাবী আনাস বিন মালেকের ভাষায় ‘ঐ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর
চেহারা ছিল যেন ‘কুরআনের পাতা’ ) ٍﻒَﺤْﺼُﻣ ُﺔَﻗَﺭَﻭ ُﻪَﻬْﺟَﻭ ( ’ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর জামা‘আতে আসার আগ্রহ
বুঝতে পেরে আবুবকর (রাঃ) পিছিয়ে আসতে চান। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) ইশারায় তাঁকে থামিয়ে দেন এবং দরজার
পর্দা ঝুলিয়ে দেন’। মৃত্যুপথযাত্রী পূত-পবিত্র রাসূল (ছাঃ)-
এর শুচিশুদ্ধ আলোকময় চেহারা যেন পরম পবিত্র সত্যসন্ধ
কুরআনের কনকোজ্জ্বল পৃষ্ঠার ন্যায় দীপ্ত ও জ্যোতির্ময়
দেখাচ্ছিল। আনাস (রাঃ)-এর এই অপূর্ব তুলনা সত্যিই কতই
না সুন্দর কতই না মনোহর। ছালাতের পাগল রাসূল (ছাঃ)-এর ভাগ্যে যোহরের ওয়াক্ত
আসার সুযোগ আর হয়নি।... এরপর সূর্য কিছুটা উপরে উঠলে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)
প্রাণপ্রিয় কন্যা ফাতেমাকে কাছে ডাকেন
এবং কানে কানে কিছু কথা বলেন।
তাতে তিনি কাঁদতে থাকেন। পরে তাকে আবার ডাকেন
এবং কানে কানে কিছু কথা বলেন। তাতে তিনি হেসে ওঠেন।
প্রথমবারে রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন যে, এই অসুখেই আমার মৃত্যু ঘটবে। তাতে তিনি কাঁদেন। দ্বিতীয়বারে তিনি বলেন
যে, পরিবারের মধ্যে তুমিই প্রথম আমার সাথে মিলিত
হবে (অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হবে)। তাতে তিনি হাসেন। এই সময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁকে ‘জান্নাতী মহিলাদের
নেত্রী’ হবার সুসংবাদ দান করেন। এই সময় রাসূল (ছাঃ)-এর
রোগ-যন্ত্রণার কষ্ট দেখে ফাতেমা (রাঃ) বলে ওঠেন,
ُﻩﺎَﺑْﺮَﻛﺍَﻭ ‘হায় কষ্ট’! রাসূল (ছাঃ)
তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ِﻡْﻮَﻴْﻟﺍ َﺪْﻌَﺑ ٌﺏْﺮَﻛ ِﻚْﻴِﺑَﺄﻯَﻠَﻋ َﺲْﻴَﻟ ‘আজকের দিনের পরে তোমার পিতার আর কষ্ট নেই’। অতঃপর তিনি হাসান ও হোসায়েনকে ডাকেন। তাদেরকে আদর
করে চুমু দেন ও তাদেরকে সদুপদেশ দেন। উভয়ের বয়স তখন
যথাক্রমে ৮ ও ৭ বছর। এরপর স্ত্রীগণকে ডাকলেন ও
তাদেরকে বিভিন্ন উপদেশ দেন। এ সময় তাঁর রোগ-
যন্ত্রণা তীব্র আকার ধারণ করে। তিনি আয়েশা (রাঃ)-
কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আয়েশা! খায়বরে যে বিষমিশ্রিত খাদ্য আমি খেয়েছিলাম, সে বিষের
প্রভাবে আমার শিরা-উপশিরা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে’। অতঃপর তিনি উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ُﺓَﻼَّﺼﻟﺍ
ْﻢُﻜُﻧﺎَﻤْﻳَﺃ ْﺖَﻜَﻠَﻣ ﺎَﻣَﻭ ُﺓَﻼَّﺼﻟﺍ ‘ছালাত ছালাত এবং তোমাদের দাস-দাসী’ অর্থাৎ ছালাতও স্ত্রীজাতির
বিষয়ে তোমরা সর্বাধিক খেয়াল রেখো’। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, একথাটি তিনি বারবার পুনরাবৃত্তি করেন’। আনাস
(রাঃ) বলেন, এটিই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর সর্বশেষ অছিয়ত’।
[65] মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু : এরপর মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হ’ল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
স্ত্রী আয়েশার বুকে ও কাঁধে ঠেস দিয়ে বসা অবস্থায় ছিলেন
পাশে রাখা পাত্র থেকে নিজ
হাতে পানি উঠিয়ে মুখে মারছিলেন আর বলছিলেন, َّﻻِﺇ َﻪَﻟِﺇ َﻻ ٍﺕﺍَﺮَﻜَﺳ ِﺕْﻮَﻤْﻠِﻟ َّﻥِﺇ ،ُﻪﻠﻟﺍ ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যুর রয়েছে কঠিন যন্ত্রণা সমূহ’। এমন সময় আয়েশা (রাঃ)-এর ভাই আব্দুর রহমান (রাঃ)
সেখানে উপস্থিত হলেন, তার হাতে কাঁচা মিসওয়াক
দেখে সেদিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দৃষ্টি গেল। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, আমি তাঁর আগ্রহ বুঝতে পেরে তার
অনুমতি নিয়ে মিসওয়াকটি চিবিয়ে নরম করে তাঁকে দিলাম।
তখন তিনি সুন্দরভাবে মিসওয়াক করলেন ও পাশে রাখা পাত্রে হাত ডুবিয়ে মুখ ধৌত করলেন। এমন সময় তিনি ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি উঠিয়ে এবং হাত
উঁচু করে বলতে থাকলেন, ‘হে আল্লাহ! নবীগণ, ছিদ্দীকগণ,
শহীদগণ এবং নেককার ব্যক্তিগণ যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ,
আমাকে তাদের সাথী করে নাও। হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর এবং আমাকে আমার সর্বোচ্চ
বন্ধুর সাথে মিলিত কর। হে আল্লাহ! আমার সর্বোচ্চ বন্ধু!’ আয়েশা (রাঃ) বলেন, শেষের কথাটি তিনি তিনবার বলেন।
অতঃপর তাঁর হাত এলিয়ে পড়ল, দৃষ্টি নিথর হয়ে গেল’।
তিনি সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে মিলিত হ’লেন। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, আমার উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এই যে, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আমার ঘরে, আমার পালার দিন এবং আমার বুক ও গলার
মধ্যে হেলান দেওয়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তাঁর মৃত্যুর পূর্বক্ষণে আল্লাহ আমার মুখের লালার সাথে তাঁর মুখের
লালা মিলিয়ে দিয়েছেন।... [68] আয়েশা (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, যখন
মৃত্যু ঘনিয়ে এল, এমতাবস্থায় তাঁর মাথা ছিল আমার রানের
উপর, তিনি বেহুঁশ হয়ে গেলেন। তারপর হুঁশ ফিরে এল। তখন
তিনি ছাদের দিকে চক্ষু নিবদ্ধ করলেন। অতঃপর বললেন,
ﻲَﻠْﻋَﻷﺍ َﻖْﻴِﻓَّﺮﻟﺍ َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ ‘হে আল্লাহ! হে সর্বোচ্চ বন্ধু!! আর এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এর দ্বারা আমি বুঝলাম, এখন তিনি আর
আমাদের পসন্দ করবেন না। বুঝলাম, যে কথা তিনি সুস্থ
অবস্থায় বলতেন, সেটাই ঠিক হ’ল। তা এই যে, কোন
নবী মৃত্যুবরণ করেন না, যতক্ষণ না জান্নাতে তাঁর
ঠিকানা দেখানো হয়। অতঃপর তাঁকে এখতিয়ার দেওয়া হয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন